রাজশাহীর তানোরে নলকূপের অরক্ষিত গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদ আর বেঁচে নেই। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর মাত্র কিছুক্ষণ আগে রাত ৯টার দিকে দীর্ঘ উদ্ধার অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল—শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে ঘটেছিল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। জানা যায়, মা ও ভাইকে নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জমি পার হচ্ছিল সাজিদ। জমিটিতে খড় বিছানো ছিল। খড়ের নিচে যে ছিল একটি অরক্ষিত গভীর নলকূপের গর্ত—তা বুঝতে পারেননি মা-ছেলে কেউই। হাঁটার এক মুহূর্তেই সাজিদ নিচে পড়ে যায়। পেছনে ‘মা, মা’ চিৎকার শুনে ফিরে তাকাতেই সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খড় সরাতেই বেরিয়ে আসে মৃত্যুকূপ।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর গ্রামের এক ব্যক্তি এখানে গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১২০ ফুট নিচেও পানি না পাওয়ায় পাইপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মুখ খোলা রেখেই ফেলে রাখা হয়। বর্ষায় গর্তের মুখ আরও বড় হয়। কোনো সতর্কতা, বাঁশের বেড়া বা ঢাকনা না থাকায় সৃষ্টি হয় এ বিপদ।
ঘটনার পর হাজারো মানুষ ভিড় করেন ঘটনাস্থলে। গর্তের পাশেই নির্ঘুম রাত কাটান সাজিদের মা—সন্তানকে আবার কোলে পাওয়ার আশায় কাঁদতে কাঁদতে তিনি ছিলেন পুরো উদ্ধার অভিযানের সামনে। প্রথমদিকে ভেতর থেকে শিশুটির সাড়া পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই শব্দ মিলিয়ে যায়, যা উদ্ধারকর্মীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
এদিকে গর্তের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল ফায়ার সার্ভিস।现场ে উপস্থিত ছিল মেডিকেল টিম ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এর আগে সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে জীবিত বা মৃত—যে অবস্থাতেই হোক, তাকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের প্রাণান্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে ছোট্ট সাজিদ চলে গেল না-ফেরার দেশে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।
বুড়িগঙ্গা.নিউজ